লাইফস্টাইলে বদল আনলে বদলে যাবে ইনফার্টিলিটিও

ইনফার্টিলিটির সমস্যা যখন প্রকট হয়ে ওঠে তখনই অনুবিক্ষণ যন্ত্রের তলায় চলে আসে দম্পতির উভয়ের। লাইফস্টাইল। গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক সময়েই লাগাম ছাড়া জীবন-যাপন আরও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার মতোই বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তৈরীতেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে। সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভধারণের জন্য লাইফস্টাইলে ভারসাম্য থাকা একান্তই জরুরি। আমরা জানি স্বাভাবিক গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজন হরমোনের ভারসাম্য, চাই ভালো মানের। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু। কিন্তু বেশ কিছু ভ্রান্ত জীবন-যাপন প্রয়োজনের মান অনুসারে দরকার এমন শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর উৎপাদন ব্যহত করে। এছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে শুধুমাত্র ফার্টিলিটির প্রশ্নেই জীবন-যাপনের বদল চাই না বরং স্বাভাবিক উপায় সন্তানধারণের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করতে জীবন-যাপনে বদল আনুন।লাইফস্টাইলের কথা এলে প্রথমেই আসে। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণের কথা। গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহের অতিরিক্ত ওজন বা ওবিজ হলে অথবা একেবারেই ক্ষীণকায়া বা আন্ডার ওয়েট হলে ফার্টিলিটির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন হরমােনের। উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে পুরুষের ক্ষেত্রে স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর মান এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ওভুলেশান বিঘ্নিত হতে পারে। যা। ক্রমেই বন্ধ্যাত্বের দরজা উন্মুক্ত করে। তাই দেহের সঠিক উচ্চতার অনুপাতে ওজন বজায় রাখতে কিছু শারীরিক কসরত করাও জরুরি। যাতে শরীর যেমন ফিট থাকে তেমনি। ফার্টিলিটির সম্ভাবনাও অনেক বাড়ে। অতএব পরিমিত এক্সারসাইজ করা খুবই জরুরি।
ইনফার্টিলিটির পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে। বর্তমানে সংক্রমণের সমস্যাই উঠে এসেছে। তাই একাধিক সঙ্গী ও অরক্ষিত দ্বৈত জীবন-যাপন না করাই ভালো। এতে সেক্সয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ যেমন রোখা যায় তেমনি সংক্রমণজনিত কারণে ইনফার্টিলিটির সমস্যাও কমে যায়।
আজকের দৌড়-ঝাঁপের জীবনে মানসিক অবসাদ, মানসিক চাপ, মানসিক টানাপোড়েন সব সময়েই মানুষকে বিব্রত করে চলেছে। আর এই মেন্টাল স্ট্রেস বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে এমনকি দম্পতির মাঝেও ঢুকে পড়েছে। যার ফলে একদিকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশানের। মতো নানাবিধ সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে অন্যদিকে ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি থেকে হরমোনের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধু স্বামী-স্ত্রীর দ্বৈত জীবন-যাপনই নয় দেখা গেছে স্ট্রেস থাকার ফলে অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজিতেও গর্ভধারণে সমস্যা হচ্ছে। তাই যথা সম্ভব মানসিক চাপ কমিয়ে ফুরফুরে। থাকার চেষ্টা করুন।
সুস্থ জীবন-যাপন আর নেশা কখনোই একসাথে চলতে পারে না। আজকাল আধুনিকতা আর সমানাধিকারেরদোহাই
দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে নারীও। সমান তালে ধূম্রপান ও মদ্যপান করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতি ফার্টিলিটিতে নারী-পুরুষ উভয়েরই ক্ষতি হচ্ছে। তামাক ও অ্যালকোহলে থাকা। টক্সিন পদার্থ পুরুষের স্পার্ম উৎপাদন ও নারীর ডিম্বাণু উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। নিয়মিত মদ্যপান করলে মহিলাদের ওভুলেশানের। সমস্যাই শুধু নয় গর্ভস্থ ভ্রুণেরও ক্ষতি হয়। শুধু নিজেরা ধূমপান করা নয় অন্য কেউ ধূমপান করলে প্যাসিভ স্মকিং থেকেও ফার্টিলিটির সমস্যা হতে পারে।
পরিবেশে থাকা বিভিন্ন টক্সিন থেকে ইনফার্টিলিটির সংকট তৈরী হতে পারে। দেখা গেছে বিভিন্ন প্রসেসড ফুড, রেডি-টু-কুক। খাবারে থাকা বিভিন্ন প্রিসারভেটিভ নারী-পুরুষ উভয়েরই ফার্টিলিটিতে আঘাত হানে। যারা নিয়মিত বিভিন্ন অর্গানিক সলভেন্ট, ডাই, কীটনাশক ও বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন সেই সব পুরুষের স্পার্ম উৎপাদন এবং শুক্রাণুর গুণমান যথেষ্ট খারাপ।
হয়। এমনকি প্রতিদিনের ব্যবহারের প্লাস্টিকের জলের বোতল থেকেও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। অনেক সময় মাছ থেকে মার্কারি ও অন্যান্য। | রাসায়নিক, ফল বা সজীতে দেওয়া কৃত্রিম রঙ নিঃশব্দ ঘাতকের মতো ফার্টিলিটিকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে।
অনেকে আবার ফার্টাইল পিরিয়ড আঁচ করতে ভুল করেন। তাই কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কথা না ভেবে সব সময় নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা আর লাইফস্টাইলে ভারসাম্যই দুর করতে পারে বন্ধ্যাত্ব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*