জীবন যখন ছিল ফুলের মতো

রবি-কবি সাহিত্যে লিখেছেন
‘বসন্তে সেহত যখন দাতা। নারীর জীবনে বসন্ত তখনই আসে যখন সে মাতৃত্বে প্রবেশ করে। আর এই বসন্তে অকাল শৈত্য নেমে আসে তখনই যখন বাধা এসে মাতৃত্বকে বিলম্বিত করে। আর এই বাধাকে অতিক্রম করে মাতৃত্বের গর্বে উন্নিত হওয়াই জীবন।
ইনফার্টিলিটি নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা জানিয়েছেন যে অন্তত ২৫ শতাংশ মহিলার বন্ধ্যাত্বের পিছনে রয়েছে। টিউবাল ব্লক। মহিলাদের দু’দিকের ওভারির সঙ্গে ইউটেরাসের সংযোগ স্থাপন করে ফ্যালোপিয়ন টিউব।
ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু এই টিউব পথে। এসেই শুক্রাণুর সঙ্গে মিলিত হয়। তবেই তো ঘটে কাঙ্খিত ফার্টিলাইজেশান। কিন্তু এই ফ্যালোপিয়ন টিউবে যদি কোনব্লকেজ তৈরি হয় তা থেকে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হয়।পূর্বে এইসব ক্ষেত্রে প্রচলিত। পন্থায় ওপেন সার্জারি করা হতো। কিন্তু
এখন ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি হওয়ার। পরএই পদ্ধতি অনেক সরল হয়ে গেছে। আগে ওপেন সার্জারিতে সাফল্যের হার
ছিল মাত্র ২০-২৫ শতাংশ। এখন কিন্তু আধুনিক ল্যাপারােস্কোপি ব্যবহারের ফলে সাফল্য প্রায় ৮০ শতাংশ।
কেন হয়?
টিউবাল ব্লক নানা কারণেই হতে পারে। কিছু মহিলা যেমন। জন্মগত ত্রুটি নিয়েই জন্মান। তাদের ক্ষেত্রে এই ক্রটি দৈহিক সমস্যা। কিন্তু স্বাভাবিক টিউব নিয়ে জন্মানোর পরেও অনেকেরই সেনুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন বা অন্য ইনফেকশন থেকেও ফ্যালোপিয়ন টিউবে ব্লক তৈরি হতে পারে। বাইরে থেকে আসা সেক্সয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন যথা গনোকক্কাল, ক্ল্যামাইডিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে টিউবাল ব্লক হয়। আবার অবিবাহিত কিছু মহিলারও অন্যান্য ইনফেকশন থেকে টিউবাল ব্লক হয়। পরিচ্ছন্নত্বার অভাবেই এই মহিলারা টিউবাল ব্লকে আক্রান্ত হন। এছাড়াও কোন মহিলার ফ্যালোপিয়ন টিউবেই যদি একটোপিক প্রেগনেন্সি আসে তা হালেও টিউবটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আসে পাসের কোন অঙ্গে ইনফেকশন যেমন অ্যাপিন্ডিসাইটিস হলে টিউবে ব্লক হতে পারে। তাছাড়া ওভারিতে সিস্টের অপারেশন হলেও টিউবে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
| বোঝার উপায় ! এমনিতে খুব একটা বহিঃপ্রকাশ না থাকায় চট করে অনেকেই টিউবাল ব্লক আন্দাজ করতে পারেন না। তাই মনে রাখবেন। ইনফেকশন হলে পেটে হালকা ব্যথা হতে পারে। ত লিউকোরিয়াও হয়। তবে এমন ভাবার কারণ নেই যে। লিউকোরিয়ার একমাত্র কারণ টিউবাল ইনফেকশন। তাই কোন পরীক্ষা ছাড়া টিউবাল ব্লক বােঝা রীতিমতো কষ্টকর। সাধারণত
বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে তারা ইনফার্টিলিটিতে ভুগতে শুরু করে যখন বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তখনই পরীক্ষার পর টিউবাল ব্লক ধরা পড়ে। ফলে টিউবাল ব্লক বােঝা বাইরে থেকে সম্ভব নয়।
এর জন্য হিস্টেরোস্যালপিঙ্গোগ্রাফি বা এইচ এস জি পরীক্ষা করা যেতে পারে। সার্ভিক্স দিয়ে একটি ডাই বা রঞ্জক প্রবেশ করালে এক্স-রেতে পুরো টিউবটা দেখা যায়। আজকাল আন্ট্রা সোনোগ্রাফিতেও টিউব পরীক্ষা করা হয়ে থাকে একে বলে সালাইন ইনফিউসাল সোনোগ্রাফি। এছাড়াও ইউটেরাসের মুখ থেকে ব্রাশ করে সেল তুলে এনে | ইনফেকশনের ধরন বোঝার চেষ্টা হয়। এর সঙ্গে ক্লামাইডিয়া পি সি আর পরীক্ষাও হয়।তাছাড়া ল্যাপারোস্কোপিক ডাই টেস্টের সহায়তায় টিউবের
বাইরের দোষ ত্রুটি সরাসরি দেখা যায়।ডায়াগনস্টিক হিস্টেরোস্কোপি। ইউটেরাসের ভিতরটা সম্বন্ধে অবহিত করে। স্যালপিঙ্গোস্কোপির সহায়তায়। ফ্যালোপিয়ন টিউবের মধ্যে অবস্থানরত সিলিয়া গুলি কতটা সক্রিয় বোঝা যায়। আর এগুলি যত সক্রিয় হবে ডিম্বাশয়
থেকে ডিম্বাণু দ্রুত এগিয়ে যেতে। পারবে। আসলে টিউবাল ইনফেকশনে সিলিয়ার নড়াচড়ার। ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
নিরাময় জেনে রাখুন টিউবাল ব্লক কোনোরকম ওষুধে সারে না।। টিউবাল ইনফেকশন কমাতে ওষুধ দরকার ঠিকই কিন্তু টিউবকে বাধা মুক্ত করতে সার্জারিই একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ।
ব্লক যদি ইনফেকশনের জন্য হয় তখন আগে নিয়ম মেনে ওষুধ খেয়ে ইনফেকশন কমিয়ে এর পর সার্জারি করতে হয়। আর এক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক বা কি হােল- সার্জারির জবাব নেই। তার সঙ্গে হারমোনিক স্ক্যালপেল, ডায়াথার্মি সিজার্স এবং লেজার ব্যবহার করে সার্জারি হয়েছে ব্যথাহীন। রক্তপাত কম। হয়। কোনো স্থায় স্কারমার্কও থাকেনা। ডায়াগনস্টিক ল্যাপারোস্কোপির সময়ও ছােটখাটো বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করে ফেলা যায়। তাই সামান্য প্রচেষ্টা আর আধুনিক চিকিৎসা। বিজ্ঞানের সাহায্যে ফ্যালোপিয়ান টিউব জনিত সমস্যার সমাধান। করে সফল মাতৃত্ব সম্ভব।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*