এই আকাশে আমার মুক্তি…

স্বাধীনতা দিবস আমরা যাপন করছি। প্রচুর রক্তের। বিনিময়ে আসা স্বাধীনতা নিয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু নারীর ব্যক্তিগত অধিকার বা তার স্বাধীনতা নিয়ে আজও আমরা। আঁধারে। তাই ততো স্বাধীনতার এতগুলি বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আজ একক-মাতৃত্বকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যা এক অর্থে নারীর ব্যক্তি সত্ত্বাকে সেলাম জানানোও বটে। | আর এই আইনি স্বীকৃতিতে যথেষ্ট গতি পেয়েছে কৃত্রিম । প্রজনন প্রক্রিয়ায় একক-মাতৃত্ব। কিন্তু কৃত্রিম উপায়ে গর্ভসঞ্চার করতে গেলে অবশ্যই বেশ কিছু অনুকুল পরিস্থিতি চাই। যিনি কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট প্রাণকে গর্ভে ধারণ করবেন তার বয়সটাও বিচাৰ্য। বিদেশে ৬২ বছর বয়সেও মা হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখা নেই। আমরা সাধারণত ৪০-এর পর শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ না। হলে আর কৃত্রিম উপায়ে গর্ভসঞ্চারের ঝুঁকি নিতে চাই না। তবে আমাদের ক্লিনিকে এসে চল্লিশোর্ধ অনেক মহিলাই গর্ভধারণ। করেছেন। এমনিতে কৃত্রিম পদ্ধতিগুলির মধ্যে আই. ভি. এফ বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে সাফল্যের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যাদের আই. ভি. এফ পদ্ধতিতে সাফল্য আসছে না তাদের ইকসি পদ্ধতি সাফল্য দিয়েছে। সাফল্যের অসংখ্য উদাহরণ আছে – আমাদের ক্লিনিকেই মাত্র ১০টি স্পার্ম নিয়ে এসেও ইকসির সহায়তায় পিতৃত্ব লাভ করেছেন এমন রেকর্ডও রয়েছে। | কৃত্রিম উপায়ে আই. ভি. এফ পদ্ধতিতে গর্ভসঞ্চার বেশ সাবধানতার সঙ্গে করতে হয়। দেখা যায় সাধারণত নারী শরীরে। প্রতি মাসে ডিম্বাণু তৈরী হয় একটি বা দুটি। অথচ ডিম্বাশয় কিন্তু মাসে ১৫ থেকে ২০ টি ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। একটি বা দু’টি তৈরি হওয়ার পর বাকিগুলি কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। ওষুধের সাহায্যে এই সব ডিম্বাণুকে বড় করা হয়। ডিম্বাণুগুলি সংগ্রহ। করে শুক্রাণুর সঙ্গে নিষেক করিয়ে প্রাণ স্থাপনের সময় খেয়াল। রাখতে হয় যে কোনও ভাবে যেন তিনটি শিশু না জন্মায়। তেমন হলে মা ও শিশু উভয়েরই ক্ষতি। একটি প্রাণ জরায়ুতে বড়। হওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত। কিছু পরিস্থিতিতে হয়ত দু’টি ভ্রুণকে বাড়তে দেওয়া হয়, কিন্তু তার বেশি একেবারেই নয়।
আই, ভি, এফ পদ্ধতিতে ডিম্বাশয় থেকে সবকটি ডিম্বাণু বের করে আনা হয়। তারপর প্রতিটি ডিম্বাণুর সঙ্গে একটি করে শুক্রাণুর নিষেক করানো হয়। এরপর একটি বা দুটি ভ্রুণকে। গর্ভে স্থাপন করা হয়। ধরুন একজনের কাছ থেকে ১৬টি ডিম্বাণু পাওয়া গেল এবার নিষেকের পর ১২টি ভ্রূণ তৈরি হল। সেখান থেকে তিনটি ভ্রণ জরায়ুতে স্থাপিত হল। বাকি নটি প্রাণ। নাইট্রোজেন তরলে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় স্বাভাবিক ভাবে পাঁচ বছর পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায়। প্রথমবার সাফল্য না এলে পরে ঐ জমিয়ে রাখা প্রাণকে স্বাভাবিক। তাপমাত্রায় এনে ফের গর্ভে স্থাপন করা যেতে পারে সহজেই। এই পদ্ধতিকে বলে ফ্রোজেন এমব্রায়ো ট্রান্সফার (এফ.ই.টি)। এই প্রচেষ্টায় অনেকেই সফল হয়েছেন এমন উদাহরণ প্রচুর আছে। এখানে বলে রাখা ভালো আই. ভি, এফ পদ্ধতিতে প্রথমবার ওষুধ ও নজরদারিতে যা খরচ হয় এফই.টি-এর ক্ষেত্রে তা অপেক্ষাকৃত কম হয়।
খরচের পাশাপাশি অনেকের একটি ভুল ধরনা রয়েছে যে কৃত্রিম উপায়ে মানবদেহের বাইরে যে ভ্রণ তৈরি হয় সেই সন্তান স্বাভাবিক হয় না! একেবারে ভুল, ভিত্তিহীন ভাবনা। যারা ভয়। পাচ্ছেন যে এভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেওয়ার চাইতে শূন্য কোল থাকুক তারা খুবই ভুল করছেন। জেনে রাখুন। গবেষণাগারে তৈরি হওয়া প্রাণ আর স্বাভাবিক ভাবে আসা প্রাণের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। খুব বাছাই করে প্রাণকে ইউটেরাসে স্থাপন করা হয়। যা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে হওয়া আর। পাঁচটা শিশুর মতােই সুস্থ। আর বাড়তি পাওনা হচ্ছে প্রতিটি প্রাণের পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনেটিক স্টাডি করা হলে তাদের মধ্যে। পরিবারের বা বংশগত কোনো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। এই পদ্ধতিতে ভ্রুনের জেনেটিক ত্রুটি দূর করে। দেওয়ায় অনেক সময়ই আগাম বংশগত রোগের প্রতিরোধে বড় ভূমিকা নেয়। এই পদ্ধতিকে ‘প্রি-ইমপ্ল্যান্টেশন জেনেটিক। ডায়াগনসিস বলে। | ভুলের কুহেলিকা ছিন্ন করে চলুন এগিয়ে যাই বিজ্ঞানের হাত ধরে সম্ভাবনার আলােক-উদ্ভাসে। স্বাধীন হওয়ার প্রথম পথ হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। তাই কেউ যদি মনে। করেন যে নিজের ক্ষমতায় তিনি সফল মাতৃত্ব লাভ করবেন এবং তার জন্য বিজ্ঞানের দেখানো পথে কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার সহায়তা নেবেন তখন আর আইনের চোখ রাঙানাের উপায় নেই। এবার তাই এক অন্য স্বাধীনতা এসেছে। সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে মাতৃত্ব উপভোগ করার।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*