মনে যে আশালয়ে এসেছি

প্রতিটি বন্ধ্যাত্বের পিছনে কারণ
অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে শুধু নারী নয় অনেক সময় পুরুষও অসম্পূর্ণতায় ভোগেন। কখনো বা নারী-পুরুষ উভয়েরই সমস্যা থেকে যায়। তাই বলে হতাশ হবেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের সমাধানও বেরিয়ে এসেছে। গর্ভসঞ্চারের জন্য সুস্থ সবল। ডিম্বাণুর মতই সক্ষম ও চলমান শুক্রাণুও চাই। আর অনেক সময় নানা কারণে পুরুষের শুক্রাণুর সরবরাহতে অপ্রতুলতা। দেখা দিলে গর্ভসঞ্চার বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে এখন বহুল প্রচলিত বেশ কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন আই. ইউ. আই (ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন), ডি, আই (ডোনার ইনসেমিনেশন), ইকসি (ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাসমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন) এবং টেসা (টেস্টিকুলার স্পার্ম অ্যাসপিরেশন)। এর মধ্যে ইকসি বা টেসাকে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় অভিনব বলা যায়।
স্বাভাবিক ভাবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন বা নিষেকের জন্য দরকার অন্তত ২০ মিলিয়ন বা দু’কোটি শুক্রাণুর। এর। মধ্যে খুব কম করে ও অন্তত ৫০ শতাংশ গতিশীল এবং ৩০ শতাংশ সঠিক গঠনের শুক্রাণু হতে হবে। যদি শুক্রাণু সংখ্যা, গতিশীলতা এবং গঠন যথাযথ না হয় তখন কৃত্রিম সহায়তা দরকার। | শুক্রাণুর সংখ্যা যদি ৫০ লক্ষ থেকে দু’কোটির মধ্যে হয়, গতিশীলতা ৩০ শতাংশ এবং সঠিক গঠন ১০ শতাংশ হলে সেই পরিস্থিতিতে আই. ইউ. আই চিকিৎসা দরকার। কিন্তু শুক্রাণুর গুণমান যদি আরও কমে যায় তখন ইকসি পদ্ধতি ছাড়া সাফল্যের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। এমন অনেকেই আছেন যাদের। টেষ্টিসে শুক্রাণুর অভাব নেই। অথচ তাদের সিমেনে শুক্রাণু থাকে না। কারণ যে নল বাহিত হয়ে শুক্রাণু টেস্টিস। থেকে বাইরে আসে তাতে যদি জন্মগত প্রতিবন্ধকতা থাকে, হয়তো কোন সংক্রমণের ফলে সেই নল রুদ্ধ হয়ে গেছে অথবা কোনো অস্ত্রোপচারে ভুল করে সেই নলটি কাটা গেলে শুক্রাণুর বের হওয়ার রাস্তা পায় না। অনেকে। আবার মেরুদণ্ড পাওয়া আঘাত থেকেও এই সমস্যায় ভোগেন। টিসা পদ্ধতিতে টেস্টিস থেকে শুক্রাণু বের করে নিয়ে। ইকসি চিকিৎসা করতে হয়। অর্থাৎ স্পার্মটিকে ইঞ্জেকশনের সাহায্যে। ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিতে হয়।
এই পন্থার উদ্ভাবন বেলজিয়ামে এক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সেখানকার এক গবেষণাগারে এক তরুন বিজ্ঞানী গবেষণা। করতে গিয়ে ভুল করে ডিম্বাণুর দেওয়ালটি ফুটো করে শুক্রাণু প্রবেশ করিয়ে দেন। উল্লেখ্য এর আগে পর্যন্ত ধারনা ছিল। ডিম্বাণুর দেওয়ালে কোন ফুটো না করে শুধু ডিম্বাণুর খোলসেই ফুটো করা হত যাতে শুক্রাণু ডিম্বাণুর খুব কাছে আসতে পারে। কিন্তু সেই তরুণ গবেষকের ‘ভুল’ নতুন আলাের দিশা দেখালাে। দেখা গেল তার ভুল করে করা পদ্ধতিতে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ফার্টিলাইজড হয়ে গেছে। বাকি যে ডিম্বাণুগুলির খোলস ফুটো। করা হয়েছে তাদের নিষেক হয় নি। এই দুর্ঘটনা থেকে জন্ম নিল নতুন আশার – যা আজ ইকসি নামে বহুল পরিচিত। | ইসির জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে পুরুষের শুক্রাণু সংগ্রহ। এর জন্য পেসা বা পারকিউটেনিয়াস এপিডিডাইমাল স্পার্ম অ্যাসপিরেশন অথবা টেসা বা টেস্টিকুলার স্পার্ম অ্যাসপিরেশন
পদ্ধতিতে অজ্ঞান করে টেস্টিস থেকে স্পার্ম বা শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। তার পর সেই
স্পার্মটিকে ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় মাইক্রোস্কোপের সহায়তায়। | ইকসি চিকিৎসার প্রথম পর্যায় অনেকটা আই. ভি. এ-এর মতই। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের করে তাতে শুক্রাণু প্রবেশ । করিয়ে নিযেক ঘটানোর পরই ভ্রুণকে গর্ভে স্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। | নলজাতক সংক্রান্ত চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়াগনসিস। এতে জরায়ুতে ঐণ স্থাপনের পূর্বেই ভ্রণের কিছু কোষ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় যে তার যেন বংশগত এবং জিনবাহিত কোনো রোগ না থাকে। ফলত জেনেটিক যা কিছু বিচ্যুতি সব কাটিয়ে যে নলজাতক জন্ম নেয় সে হয়। সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল। | ইনফার্টিলিটি নিয়ে গবেষণায় বিভিন্ন । ধরণের উদ্ভাবন যুগান্তকারী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এখানে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চিকিৎসা সময়ে শুরু করা। তাহলে সাফল্যের সম্ভাবনাও নিশ্চিত হয়। এর পাশাপাশি প্রযয়োজন যথেষ্ট সচেতনতাও, কারণ ইনফার্টিলিটি নিয়ে অজ্ঞতাই সব বিপত্তির মুলে। অতএব সমস্যাও জটিল হয়ে যায়। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুফল গ্রহণ করতে চাই সংস্কারহীন মানসিকতা।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*